নিজস্ব প্রতিবেদক
বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কানাডায় অবস্থানরত বঙ্গবন্ধু হত্যার খুনি নূর চৌধুরী, আমেরিকায় রাশেদ চৌধুরী এবং মেজর ডালিমকে পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে নিয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা নিয়ে জাতিকে অভিশাপ মুক্ত করতে হবে। নূরকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য আমরা আইনি লড়াই করছি। স্থানীয় সময় রবিবার টরন্টো মেট্রো কনভেনশন সেন্টারে তাকে দেয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রবাসীরা যেমন দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে, তেমনি অর্থনীতিকেও মজবুত করে। আমরা শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলছি। আপনারা সেখানে বিনিয়োগ করুন। নারী এবং প্রবাসীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাইরে দেখালাম, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। আমি মুক্তি দেয়ার কে? আমি তো মামলা দেয়নি, বিচারও করিনি। জেলে দিয়েছেন, তার তিন প্রিয় ইয়াজউদ্দিন, ফখরুদ্দীন আর মঈনুদ্দিন। আর বিচার করেছেন আদালত। তার দলের এতো শিক্ষিত শিক্ষিত আইনজীবীরা কি করলেন?
আমি যদি রাজনৈতিক ভাবে জেলে দিতাম, তাহলে তিনি যখন বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারলেন, ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে পবিত্র কোরান পুড়ালেন, গাছ কেটে সাবার করলেন, তখন মামলা দিয়ে পারতাম। আমি তো তা করিনি।
বরং কোকো মারা গেলে আমি সমবেদনা জানানোর জন্য বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যাই। কিন্তু আমাকে তার বাসায় ঢুকতে দেননি। অথচ স্বাধীনতার পর মেজর জিয়া এবং বেগম জিয়া কত বার যে আমার বাসায় গেছেন। যায় ফলে তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত হতে পেরেছিলেন।
তিনি আরো বলেন, আমি আট বছর প্রবাসের দুর্বিসহ রিফুজি জীবন-যাপন করে নানান প্রতিকূল অতিক্রম করে দেশে গিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি, আমার পিতার অসমাপ্ত স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য। যিনি একটি প্রদেশকে নয় মাসের যুদ্ধের মাধ্যমে মুক্ত করে স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা দেন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটিকে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্য জাতিসংঘ, ওআইসি ইত্যাদি আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বীকৃতি আদায় করে দেশ গড়ার প্রস্তুতি নেন। তখনই জিয়াউর রহমান-মুশতাকেরা প্রেসিডেন্ট সাইয়েমকে সরিয়ে দিয়ে অবৈধ ভাবে ক্ষমতা দখল করে। পরে হা/না ভোটে দল গঠন করে নস্যাৎ করে দেয় গণতন্ত্র। স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী বানান।
তিনি দীর্ঘ বক্তৃতায় তার সরকারের নানা উন্নয়ন আর সাফল্যের চিত্র তুলে ধরে বলেন, আমাদের অর্জন আকাশ থেকে সমুদ্রের তলদেশ পর্যন্ত। আমরা যেমন স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আকাশ বিজয় করতে সক্ষম হয়েছি, তেমনি সাব মেরিনের মাধ্যমে সমুদ্র বিজয় করেছি।
ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরির মাধ্যমে স্বল্পোন্নত থেকে দেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে। যার ফল পাচ্ছে, দেশের সাধারণ মানুষ। এখন দেশের ৯৩% মানুষ বিদ্যুত পাচ্ছে। আমরা জরিপ করে দেখেছি, দেশে এখন মাত্র দুই লাখের মানুষ ভূমিহীন। আমরা তাদের জন্যও কর্মসূচি নিচ্ছি।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, জি-৭ ধনী রাষ্ট্রের সম্মেলন। আজ বাংলাদেশ এই সম্মেলনে যোগদানের পেছনে রয়েছে উন্নতশীল দেশ হিসেবে মর্যাদা লাভ।
স্থানীয় ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে গোলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে এবং আজিজুর রহমান প্রিন্সের পরিচালনায় সংবর্ধনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল হক হানিফ, আব্দুস সালাম এবং সেলিম জুবেরী।
আগামীকাল টরন্টো থেকে শেখ হাসিনা দেশের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে সকালে কানাডার মিয়ানমার বিষয়ক দূত বব রে, কানাডার সাসকাচোয়ান প্রদেশের উপ প্রধানমন্ত্রী জেরেমি হ্যারিসন এবং কমার্শিয়াল কোঅপারেশন অব কানাডার প্রেসিডেন্ট মার্টিন জাবলোকির সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন।
তিনি কানাডার স্থানীয় সময় সোমবার দুপুরে টরন্টো থেকে দেশের পথে রওনা হবেন এবং দুবাইয়ে যাত্রাবিরতি করে মঙ্গলবার রাতে ঢাকা পৌঁছানোর কথা রয়েছে।